শিক্ষা:

শিক্ষা জগতে এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ

বিদ্যালয়ে অবৈতনিক শিক্ষা অভিযান

পরমপূজ্য শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর ১৯৮১ সালে একটি প্রথম গ্রামীণ বিদ্যালয় – বেদ বিজ্ঞান মহাবিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করেন; তিনি একদিন লক্ষ্য করলেন কিছু শিশু আর্ট অফ লিভিং কেন্দ্রের সামনে মাঠে খেলাধূলা করছে। ঐ শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের অন্য কোন সুযোগ না থাকায় তিনি এদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।

প্রথমে একজন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করা হয় যাতে শিশুরা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষামূলক খেলাধূলার সুযোগ এবং বিনামূল্যে মধ্যাহ্নের খাবার পায়। এ ব্যাপারটা শিশু এবং তার অভিভাবকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে এবং এখনও পর্যন্ত সেই ব্যবস্থাই চলে আসছে।

বিদ্যালয়ের উন্নতির সাথে সাথে প্রাথমিক শিক্ষার পরিকাঠামো গড়ে ওঠে এবং ছাত্র সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।

এখন এই বিদ্যালয় সারা ভারতবর্ষের আর্ট অফ লিভিং দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ৪০৪ টি অবৈতনিক বিদ্যালয়ের আদর্শস্বরূপ। এই বিদ্যালয়গুলি গ্রামীণ ও আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে শিক্ষার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।এই অবৈতনিক বিদ্যালয় সম্বন্ধে আরো জানুন ।

পরিবারের প্রথম প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রী

বর্তমানে প্রথম প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের শতকরা ৯৫ ভাগ এইসব বিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুযোগ পায়। স্থানীয় পরীক্ষায় এদের সাফল্যের হার ১০০ শতাংশ।

শ্রীযুক্তা সাবিত্রী নামে এক মায়ের বক্তব্য : “এই বয়সে আমার মেয়ের কোন খেত-খামারে কাজ করার কথা। আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি যে ওকে লেখাপড়া শেখাতে পারব। ওকে স্কুলে যেতে দেখলে আমার মনটা আনন্দে ভরে ওঠে।”

মানসিক চাপমুক্ত বিদ্যালয়

বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছা্ত্রীদের পোষাক, জুতো-মোজা, ব্যাগ. বই, লেখার সরঞ্জাম এবং মধ্যাহ্নে খাবার সরবরাহ করা হয়। এছাড়া যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থাও আছে, যাতে কোন কারণে তাদের স্কুলে আসা বন্ধ না হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের মন ও শরীর সুস্থ রাখার জন্য যোগব্যায়াম, ধ্যান, খেলাধুলা এবং নানা সৃজনশীল কাজকর্ম যেমন নৃত্য, সংগীত, অংকন, চিত্রকলা প্রভৃতি বিষয় বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের মধ্যে বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শিশুদের জন্য দি আর্ট অফ লিভিং –এর বিশেষ প্রকল্প “আর্ট এক্সেল” কোর্স নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে যাতে শিশুরা তাদের বাড়ির নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারে, এছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ভ্রাম্যমাণ ঔষধালয়েরও সুবন্দোবস্ত থাকে।

রাজনৈতিক পরিকাঠামো সম্বন্ধে সচেতন হতে এবং নেতৃত্বের গুণসম্পন্ন করে গড়ে তোলার জন্য বিদ্যালয়ে নিজস্ব ‘ক্যাবিনেট’ আছে। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেরাই এই ‘ক্যাবিনেট’ নির্বাচন করে; ছাত্র-ছাত্রীরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করে ভারতীয় সংসদীয় গণতন্ত্র এবং তার পরিচালন পদ্ধতি সম্বন্ধে বাস্তবিকভাবে জ্ঞান লাভ করে। এই কমিটি নিচের ক্লাসের শিশুদের পড়াশোনায় উৎসাহ বৃদ্ধি থেকে স্কুল পরিচালনা অবধি সব বিষয়ে অংশগ্রহণ করে।

উন্নয়নশীল সম্প্রদায়

মেয়েদের শিক্ষিত করার জন্য ও তাদের চারিত্রিক দৃঢ়তা বৃদ্ধি করতে উপরের শ্রেণীর ছাত্রীদের সেলাই, কম্পিউটার চালানো এবং কাঠের কাজ শেখানো হয়। সেই সঙ্গে এদের অন্ততঃ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করা হয়।

বর্তমান ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে প্রাক্তনীদের নিয়মিত আলোচনা সভা করার প্রক্রিয়া সম্প্রতি চালু হয়েছে। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা তাদের অভিজ্ঞতা বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বিনিময় করে যাতে তারা মাধ্যমিক স্তর পর্য্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত হয় এবং তাদের জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সফল হয়।

প্রাক্তনীরা নিয়মিত শিশুদের এবং তাদের অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করে যাতে শিক্ষার গুরুত্ব সম্বন্ধে তারা বিশেষভাবে অবগত হয়।